জন্মাষ্টমী,প্রতি বছর এই দিনটি এলেই আনন্দে,উৎসাহে,কর্মশক্তিতে মনটা ভরে উঠে।আজ এমন একজনের আবির্ভাবতিথি যিনি তাঁর জীবনে ও কর্মে আমাদের শিখিয়ে গেছেন কর্মযোগ কি বস্তুু।তিনি সর্বদা কর্মে লিপ্ত থেকেছেন,সমাজের জন্য,রাষ্ট্রের জন্য।তথাকথিত ধর্মগুরুদের মত কর্ম ত্যাগ করে সন্ন্যাসের নাম করে আয়েশ করেন নি।বলেছেন মোহবশত কর্মের ত্যাগ তামসিক ত্যাগ।তিনি জানতেন যদ্ যদ্ আচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ, সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যাক্তিরা যা যা কর্ম করবেন,যা যা আচরণ করবেন তাই সাধারণ মানুষেরা অনুসরণ করবে।তাই তিনি সারাজীবন কর্ম করে গেছেন আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাবার জন্য।তিনি সংগ্রাম করেছেন,লড়াই করেছেন,সংসার করেছেন,সংসার সাগরের সাথে বিক্ষোভও করেছেন,তিনি নাচ,গান,জপ করে জীবন অতিবাহিত করেন নি।


প্রতিবছর এই পূণ্যতিথিতে আমরা মাসব্যাপী জ্ঞানযজ্ঞ করে থাকি,মহাভারত ও শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ,সেমিনারের আয়োজন করে থাকি।তবে এই বছর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হয়নি।কিন্তু আমাদের এই জ্ঞানযজ্ঞ  চালিয়ে যাব।শ্রীকৃষ্ণ নিজেই আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন এই শিক্ষা,ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে,এই জগতে জ্ঞানের সদৃশ পবিত্র বস্তুু আর কিছুই নেই।তার ধারাবাহিকতায় ই কয়েক পর্বে আমরা দেখে নেব সংক্ষেপে এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ।তার প্রথম পর্ব থাকবে আজ।


শ্রীকৃষ্ণের জীবনীকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।মহাভারতে প্রাপ্ত তাঁর জীবনের প্রাপ্তবয়স্ক অংশের ঘটনা ও হরিবংশ,বিষ্ণুপুরাণ,ভাগবত পুরাণে পাওয়া যাওয়া অলৌকিকত্ব মিশ্রিত বাল্যকালের বর্ণনা।


Oriental Study বা প্রাচ্যবিদ্যার জনক,বিখ্যাত পাণ্ডুলিপি বিশেষজ্ঞ, ভারতের রাষ্ট্রীয় পাণ্ডুলিপি সংস্থা Bhandarkal Oriental Research Institute যাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে সেই Dr. R G Bhandarkar তাঁর Vaishnavaisim,Shaivaism and other minor sects গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের ঘটনাসমূহ আসলে খ্রিষ্টীয় শতকের আগে কখনো লিপিবদ্ধ হয়নি।শ্রীকৃষ্ণ প্রাচীনকালে তার পূর্ণ বয়সের রাজনৈতিক, সামরিক,সামাজিক ভূমিকার কারণেই জনপ্রিয় ছিলেন।পরবর্তীতে খ্রিষ্ট জন্মের পরের সময়ে বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী মিশ্রিত করে তার বাল্যকাল লেখা হয় পুরাণ নামক বিভিন্ন গ্রন্থে।


উদাহরণস্বরুপ ধরুন তাঁর জন্মের সময়ের একটি কাহিনী।আমরা টিভিতে দেখে থাকি তাঁর জন্মের সময়ে তাঁকে লুকিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যশোদার ঘরে আর সেখানে রাখা হয়েছিল আরেক কন্যাশিশুকে।সেই কন্যাশিশুটিকে কংস হত্যা করতে গেলে সে অলৌকিকভাবে তার হাত থেকে ছুটে হাহা করে অট্টহাস্য করতে করতে উপরের দিকে উড়ে চলে যায় আর শ্রীকৃষ্ণের হাতে কংসের মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণী করে।সচেতন পাঠকমাত্রেই বুঝবেন এটা অতিপ্রাকৃত কাহিনী, বাস্তব ঘটনা নয়।তাহলে বাস্তব ঘটনা কি ছিল?


হরিবংশ ২.৪.৩৬ অনুযায়ী কংস নতুন শিশুর জন্মের সংবাদ পেয়ে ছুটে আসে এবং বালিকাটিকে পাথরে ছুড়ে মারেন।পরবর্তীকালের রচনা ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী কংস বালিকাটিকে হাতে নেয়া মাত্রই সে আকাশে উড়ে গিয়েছিল,অর্থাৎ তুলনামূলক প্রাচীন হরিবংশে পাথরে পিষে বা ছুঁড়ে মারার কথাটি রয়েছে,সেটিই পরবর্তীতে বিকৃত হয়ে এই অলৌকিক কাহিনীতে পরিণত হয়। পরবর্তীকালের কবিরা ভাগবত ও বিষ্ণুপুরাণে এবং হরিবংশের প্রক্ষিপ্ত অংশে এই অলৌকিক কাহিনী রচনা করে।এভাবেই ক্রমে ক্রমে বাস্তবের ব্যাক্তি শ্রীকৃষ্ণ মিথলজিতে পরিণত হয়,আর তাই আজ বিধর্মী ও নাস্তিকরা শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণকে অবাস্তব কাহিনী বলার ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগ পায়।এই দায় আমাদের ই।


একইভাবে কেন কংস তার বোনের সন্তানকে হত্যা করতে চাইবেন তাও আমরা বুঝে নিতে পারি।আমাদেরকে অলৌকিক কাহিনী পড়ানো হয় যে কংস দৈববাণী পেয়েছিল যে দেবকীর গর্ভের সন্তান ই তাকে হত্যা করবে,এই কারণেই সে শিশুহত্যার মত জঘন্য পথ বেছে নিয়েছিল।আমরা আগেও দেখেছি প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্রসমূহে যেমন রামায়ণে যুদ্ধের পর মা সীতার চরিত্র চিন্তনেও শ্রী রামের মনের ভাবনা ও আমাত্যদের গোপন পরামর্শকে সেখানে দৈববাণী হিসেবে কাব্যরূপ দেয়া হয়েছে।এখানেও ঘটনা সম্ভবত তেমন ই।


মথুরার রাজা কংস তার পিতা উগ্রসেনকে বন্দী করে নিজেই জোরপূর্বক রাজা হন।অত্যন্ত অত্যাচারী হওয়ায় সবাই তার প্রতি বিরক্ত ছিল,সম্ভাবনা ছিল রাজদ্রোহের।উগ্রসেনের আপন ভাই,কংসের কাকা দেবক।তার কন্যা দেবকী।নিজের কাকাত বোন দেবকীকে ধুমধামের সহিত বিয়ে দিলেও এরমধ্যেই তার ষড়যন্ত্রকারী কোন সহায়ক আমাত্য তাকে আভাস দেয় যে কাকা দেবক বিদ্রোহীগণের সাথে দেবকীর সন্তানকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে আশা বুনতে পারে এবং তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করতে পারে।রাজবংশের খুব ই সচরাচর দৃশ্য এটি।হরিবংশ ২.২২.২২ এ দেখা যায় কংসের কোন বিশ্বস্ত আমাত্য এবং চর ছিলনা,তার অত্যাচারে সবাই বিরক্ত ছিল,তিনি বলছেন

 "অনামত্যস্য শুন্যস্য চরঅন্ধস্য মামৈব তু"

আমার কোন বিশ্বস্ত আমাত্য নেই,চর নেই,তাই চোখ থেকেও আমি অন্ধের ন্যায়।

হরিবংশ ২.২২.৪৬ এ আমরা দেখতে পাই কংস কৃষ্ণের পিতা বসুদেবকেও সন্দেহ করতেন কেননা বসুদেব ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান,বলাবাহুল্য শ্রীকৃষ্ণও পিতা হতে এই গুণপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।এই কারণেই কংস ভীত হয়ে পড়েছিল দেবকীর সন্তান নিয়ে,আর বিশ্বস্ত চরের অভাব,আমাত্যের অভাব এইসব দূর্বলতার সুযোগেই শিশু কৃষ্ণকে কারাগার হতে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল বসুদেবের পক্ষে।অতএব কংস সিদ্ধান্ত নেন তাদেরকে বন্দী করার এবং কারাগারে কোন সন্তান জন্ম নিলে হত্যা করার।এবং ভবিষ্যতে তার আমাত্যদের এই আশংকা এবং তার মনের এই ভয় আসলেই সত্য হয়েছিল,শ্রীকৃষ্ণ ই তাকে বধ করে মথুরার ক্ষমতার পট পরিবর্তন করে দেন,মথুরার জনগণের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসে।


এভাবেই ভাদ্রমাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথির অন্ধকার এক প্রবল বর্ষণের,বিদ্যুৎ চমকানোর দূর্যোগময় রাতে উত্তর প্রদেশের মথুরা নামক স্থানের এক কারাগারে জন্ম নেন শ্রীকৃষ্ণ,অভ্যন্তরীণ সহযোগীদের মাধ্যমে তাকে অন্য একটি শিশু দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয় মথুরা হতে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত গোকুল নামক স্থানের স্থানীয় সমাজপতি যাদব নন্দের ঘরে।জন্মের শুরুটাই প্রাসাদ রাজনীতি দিয়ে শুরু হয় যার তিনি পরবর্তী জীবনে ইতিহাসখ্যাত রাজনীতিবিদে পরিণত হবেন তাতে আর আশ্চর্য কি!

একটি তথ্য আমরা অনেকেই জানিনা যে এই গোকুল কিন্তু বৃন্দাবন নয়।শ্রীকৃষ্ণের বয়স যখন মাত্র ৩ বছর তখন নন্দ ও যশোদা গোকুল হতে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৃন্দাবনে গিয়ে নতুন বসতি স্থাপন করেন।

উল্লেখ্য যে তাঁর জন্মের সেই সময়কাল প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আজ হতে কম করে হলেও সাড়ে তিন হতে চারহাজার বছর আগের ঘটনা।বৃহস্পতি সিদ্ধান্তের গণনা অনুযায়ী যদিও তা ৫২৪৭ বছর পূর্বে।


এদিকে আমরা দেখতে পাই শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম অস্ত্রবিদ্যায় অতি পারদর্শী হয়ে উঠেন,তাঁরা নিয়মিত বৃন্দাবনে প্রভাবশালী চরিত্র হয়ে উঠছিলে,কংস নিজের প্রভাব কমে যাচ্ছে এই ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন এবং নন্দ,তার দুই পুত্রসহ ব্রজবাসীকে মথুরায় আসার নিমন্ত্রণ দেন বার্ষিক করপ্রদান, যজ্ঞ ও ধনুক উৎসবকে কেন্দ্র করে(হরিবংশ ২.২২.৮৬,৯১)

কংসের পরিকল্পনা ছিল শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম বালক হলেও কুস্তি খেলায় পারদর্শী ছিল এবং তাদেরকে কুস্তি খেলার আহবান জানালে তারা অবশ্যই অংশ নেবেন।এই সুযোগে বলবান দুইজন কুস্তি খেলোয়াড়ের মাধ্যমে এদের সাথে কুস্তি খেলাবেন,তাদের শক্তি পরীক্ষা করে দেখবেন এবং সুযোগ পেলে ছলনায় বধও করবেন।কংসের দূত অক্রুরের আমন্ত্রণে-


একাদশ সমাস্তত্র গুঢ়ার্চিঃ সবলৌৎবস

১১ বছর বয়সে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরামের সাথে করে বৃন্দাবন ত্যাগ করলেন।

(ভাগবতাম ৩.২.২৬)


বুঝতেই পারছেন পাঠকরা,বৃন্দাবন ত্যাগের সময় তিনি ছিলেন নিতান্তই ১১ বছরের বালক।অথচ আমরা হিন্দুরা তাঁকে ঘিরে রাধা নামক কাল্পনিক চরিত্রকে জড়িয়ে বৃন্দাবনে কত অশ্লীল, হাস্যরসাত্মক কাহিনী রচনা করেছি যেসবের কোন ভিত্তিই নেই।


সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হল মথুরায় পৌঁছে ছদ্মবেশে তাঁরা কি কি করেছিলেন তার বর্ণনা।আমরা বিষ্ণুপর্বের ২৭ নং অধ্যায়ে দেখতে পাই কিভাবে এক ধোপার কাছ থেকে ছদ্মবেশে তাঁরা দামী রঙীন কাপড় চাইতে গেলে ধোপা তাদেরকে সন্দেহ করে এবং তখন বলপূর্বক তাঁরা সেই ধোপা হতে কাপড় সংগ্রহ করে।এরপর এক কুব্জা মহিলা হতে তাঁরা সুগন্ধি প্রসাধনী সংগ্রহ করেন এবং এক ফুল বিক্রেতা হতে মালা সংগ্রহ করে অভিজাত ব্যাক্তি সেজে কংসের প্রাসাদে প্রবেশ করেন ছদ্মবেশে।কিন্তু সেখানে ঘটে যায় এক অঘটন।


সেখানে রাখা ছিল ধনুক উৎসবের প্রতিযোগিতার জন্য এক বিখ্যাত অতি শক্তিশালী ধনুক।প্রহরী পোশাক আশাক দেখে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে দেখে অভিজাত রাজপুত্র মনে করেছিল বিধায় তাদেরকে ধনুকটি ধরতে দেয়।হরিবংশ ২.২৭.৪৭ এ আমরা দেখতে পাই শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম চেয়েছিলেন ধনুকে তীর পরিয়ে দেখতে,কেবল পরীক্ষা করতে ধনুকটি কেমন।কিন্তু তাঁদের বাহুবল এতই অসাধারণ ছিল বাঁকাতে গিয়ে ধনুকটি ভেঙে যায়! প্রহরী হতবিহবল হয়ে পড়ে এবং তৎক্ষণাৎ কৃষ্ণ ও বলরাম সেখান থেকে পালিয়ে যান।এদিকে ভীত সন্ত্রস্ত প্রহরী দ্রুত রাজা কংসকে গিয়ে ঘটনাটি খুলে বলে।


এই অদ্ভুত খবর পেয়ে কংস ভাবলেন-

কথম বালো বিগতভিরবমত্য মহাবলম্

কারা এই মহাবলশালী বালকদ্বয়!


যস্যর্থে দারুণম কর্ম কৃতম্ লোকবিগর্হিতম্

এরাই কি সেই বালকদ্বয় যাদের হত্যা করার জন্য আমি এতদিন নানা গর্হিত কাজ করেছি!

(হরিবংশ ২.২৮.২-৩)


বলা বাহুল্য যে কৃষ্ণ ও বলরামকে হত্যার অনেক চেষ্টা ই করেছেন এত বছরে কংস।তাই আজকে তার এই উপলব্ধি হল।


এই দুশ্চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে কংস গেলেন পরেরদিনের উৎসবের ষড়যন্ত্রমূলক কুস্তিখেলার আসর পরিদর্শন করতে গেলেন,দেখে আসলেন সব ঠিকঠাক আছে কিনা(২.২৮.৬)।এরপর কংস তার আসল পাশার চাল খেললেন,ডাকলেন দুই মহাবলী চানূর ও মুষ্ঠিককে,বললেন-


তভ্যম যুধি নিরস্তভ্যম্ গোপাভ্যাম্ রঙ্গসন্নিধৌ।

অয়ত্যাম্ চ তদাত্বে চ শ্রেয়ো মম ভবিষ্যতি।।

(হরিবংশ,২.২৮.২৫)

অনুবাদ- এই, গোপবালক দুইটিকে কালকের ক্রীড়ায় বধ কর তোমরা,এতে আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত উভয়ের ই উপকার হবে।


তবে ধুরন্ধর রাজা কংসের এটি ছিল প্ল্যান বি বা ব্যাকাপ প্ল্যান।তার আসল পরিকল্পনা ছিল অন্য,এমনভাবে দুই যাদব ভ্রাতাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেন যেন সবাই মনে করে এটা দূর্ঘটনা।


তিনি কুবলয়াপীঢ় নামে একটি পাগলা হাতির ব্যাবস্থা করলেন।হস্তী দুটির মাহুতকে বললেন যদি কুস্তিক্রীড়ায় মৃত্যু না হয় তবে হাতিদুটোকে ওদের উদ্দেশ্য করে ছেড়ে দেবে,পিষ্ট করে মেরে ফেলবে ওদের।


বললেন-

"যাদবরা আমার পিতার ভক্ত যাকে আমি বন্দী করে রাজ্য দখল করেছি।এই দুই যাদবশ্রেষ্ঠকে হত্যা করতে পারলে যাদবদের আমার বিরুদ্ধে যাবার আর ক্ষমতা থাকবেনা,আমি নিশ্চিন্তে থাকব।"

(২.২৮.৩০,৩৪,৩৬,৩৭)


উৎসবের প্রথম দিন অতিক্রান্ত হল,দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হল,সাজ সাজ রব।কুবলয়াপীঢ় হাতিটিকে নিয়ে তার মাহুত প্রবেশ করল অনুষ্ঠানস্থলে,যেই কৃষ্ণ ও বলরাম প্রবেশ করলেন সেখানে আগের ইংগিত অনুযায়ী পাগলা হাতিটিকে লেলিয়ে দেয়া হল তাদের হত্যা করতে।


কিন্তু যাদবরা ছিল পশুপালনে দক্ষ,তারা ভালো করে জানেন কিভাবে পশুকে বশ বা পরাজিত করতে হয়।কৌশলে তারা হাতিটিকে ভূমিতে ফেলে দিলেন এবং হাতিটির নিজের দাঁতদুটো দিয়েই হাঁতিটিকে আহত করে দিলেন,পরিণামে হাঁতিটি মারা গেল।উপস্থিত সকলে এই আকস্মিক দূর্ঘটনায় বিহ্বল হলেও হাতিটি পরাজিত হওয়া মাত্রই দুই বালকের বীরত্বে চারদিকে প্রচুর তালি বাজতে লাগল,সবাই প্রশংসাবৃষ্টিতে ভাসিয়ে দিল দুই ভাইকে।কংসের পরিকল্পনা অর্ধেক সফল হল,সবাই ভাবল এটি দূর্ঘটনা।


কৃষ্ণম ভৃশ্যাস্তমুখঃ সরোশম্ সমুদৈক্ষত..

কংসের মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল দুইভাইয়ের এই বীরত্ব দেখে,রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন তিনি কৃষ্ণের দিকে।করতে থাকলেন পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা,রণভূমিতে যুদ্ধ শুরুর আগে মনোভূমিতেই যুদ্ধের সূচনা হয়,আগামী পর্বে দেখব কি সুদূরপ্রসারী হয়েছিল এই যুদ্ধের পরিণাম যা বদলে দিয়েছিল ভারতভূমির ভবিষ্যৎ।