গুজরাট,শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকার গুজরাট,মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী, মহাত্মা গান্ধী,সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল ও নরেন্দ্র মোদীর গুজরাটে আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে জন্ম নিয়েছিলেন এক ঋষি। তিনি অনু-পরমাণু বিজ্ঞানের প্রাচীম জনক, কণা নামে পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম অংশকে আমরা চিনি তা তাঁর নাম থেকেই আগত(কণাদ-কণা) , তিনি হলেন বৈশেষিক দর্শনের জনক ঋষি কণাদ। প্রাচীন গ্রীসে যখন দর্শনের ফুলঝুরি ঝড়াচ্ছিলেন এরিস্টটল সেই সময়ে প্রাচ্যে তার স্নিগ্ধ বাতাস বইয়ে দিচ্ছিলেন জগতবিখ্যাত এই ঋষি। সেই অতি প্রাচীনকালে আলাদাভাবে অভিকর্ষ শক্তি(গুরুত্ব,Gravity) এর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি অমর হয়ে আছেন। পদার্থের গঠন নিয়ে তাঁর আবিস্কার ও অবদানের কথা সবাই জানেন। তাই আজ তা নিয়ে আলোচনা করবনা। আজ তাঁর আবিস্কৃত একদম ভিন্ন তিনটি সূত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

<
বৈশেষিক সূত্র, মহর্ষি কণাদের আজ হতে প্রায় ২৫০০ বছর আগের আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ-২য় শতকের লেখা বৈশেষিক দর্শনের কালজয়ী গ্রন্থ।এই গ্রন্থের ৫ম অধ্যায়ে মহর্ষি কণাদ আলোচনা করেছেন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল ও তার গতিপথ,বস্তুর পতন ও তার উপর অভিকর্ষ বলের প্রভাব নিয়ে। শংকর মিশ্র খ্রিষ্টীয় ৭ম শতকে মহর্ষি কণাদের এই কালজয়ী গ্রন্থের ভাষ্য রচনা করেছেন উপাস্কর নামে।আমরা আজ দেখব বস্তুর পতন সম্বন্ধে আজ থেকে প্রায় ২২০০ বছর আগে ঋষি কণাদ কি বলেছিলেন,কিভাবে করেছিলেন অভিকর্ষ বলের অবতারণা আর দেখব কণাদের শ্লোক নিয়ে শংকর মিশ্রের ভাষ্য। 

কণাদ-
"সংযোগাভাবে গুরুত্বাত্ পতনম্"
বাইরের কোন শক্তির প্রভাব ব্যাতিত একটি বস্তুর পতন হতেই থাকবে।
(বৈশেষিক সূত্র,অধ্যায় ৫,আহ্নিক ১,শ্লোক ৭)

Screenshot_20200826-154125

আপেল গাছের নিচে বই পড়ার সময় একটি আপেল নিচে পতিত হবার সূত্র ধরে মহাবিজ্ঞানী নিউটনের মহাকর্ষ বল আবিস্কারের সেই বিখ্যাত গল্প আমরা জানি।খেয়াল করে দেখবেন প্রথম শ্লোকটির ছবিতে,৭ম শতকে শংকর মিশ্র পতনশীল বস্তুর অভিকর্ষ বলের উদাহরণ দিতে গিয়ে পতনশীল ফলের কথা বলেছেন।৭ম শতকের শংকর মিশ্র আর ষোড়শ শতকের নিউটন,বয়সের পার্থক্যটা ৮০০ বছরের হলেও চিন্তার মিলটা বড়ই অদ্ভূত।

নিউটনের প্রথম সূত্র যেন কি ছিল?

নিউটনের প্রথম সূত্র: বাইরে থেকে কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে  চলতেই থাকে।

কণাদ-
"নোদনবিশেষাভাবাত্নোদ্র্ধ্বং ন তির্য়জ্ঞমনম্"
(শ্লোক ৮)
বাইরে থেকে বিশেষ শক্তি(নোদন বিশেষ) না থাকলে বস্তু উপরে,তীর্যক অর্থাৎ পাশাপাশি  কোন দিকে(তিনদিকের কোন দিকেই কেবল নিচের দিক ছাড়া) যেতে পারেনা।

Screenshot_20200826-154423



নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং 
"বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।" অর্থাৎ বলের প্রভাবেই বস্তু নির্দিষ্ট দিকে গতিশীল হয়।

কণাদ-
"প্রযত্ন বিশেষত্নোদন বিশেষঃ"
(শ্লোক ৯)
বিশেষ বলে কাজ হলে(প্রযত্ন বিশেষ) তার বিপরীত কাজও(নোদন বিশেষ) ঘটিত হইবে।
Screenshot_20200826_155206



নিউটনের তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷

Screenshot_20200826-152315

আর আজ হতে ২৬০০ বছর আগে,খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে প্রাচীন ভারতীয় আর্যবিজ্ঞানী ব্রহ্মগুপ্ত প্রথম এই অভিকর্ষ বল বা গুরুত্বাকর্ষণম্ এর কথা সূত্র হিসেবে তুলে ধরেন।তিনি বলেন-

" পৃথিবীপৃষ্ঠ সকল দিকেই একই,এর উপরেই আমরা দাঁড়িয়ে থাকি,সকল ভরযুক্ত পদার্থ প্রকৃতির নিয়মেই ভূ্মির দিকে পতিত হয়,যেমন জলের ধর্ম প্রবাহিত হওয়া তেমনি ভূমিরও ধর্ম বস্তুকে আকর্ষণ করা।..."

Screenshot_20200826_162255


আর্যভারত শুরু করেছিল হাজার হাজার বছর আগে,আজ জ্ঞানের সে মশাল এগিয়ে নিয়ে চলেছে ইউরোপ আমেরিকার সৈনিকরা।আর আর্য ভারত আজ শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণের মত তার বীর সন্তানদের নামে আজগুবি বানানো গল্প ফেঁদে ভক্তির ব্যবসা করে খাচ্ছে,বিজ্ঞান আজ চলে গেছে পেছনে।প্রাচীন গৌরব স্মরণ করেই তাই ক্ষান্ত হবার উপায় নেই,তাকে অনুসরণ করে  সামনে এগিয়ে চলুন বেদের পথ ধরে।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি.